গরুর হাটটি সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘন্টা খোলা পাবেন। তবে রবিবার এটি সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় এবং ঐতিহ্যবাহী হাট হলো গাবতলী গরুর হাট। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের কাছেই বসে এ হাটটি। গাবতলী হাটে অনেক গরু ওঠে বলে ক্রেতারা এখান থেকে গরু কিনতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। গাবতলী হাট গরুর একটি স্থায়ী হাট, সারা বছরই এখানে গরু বেচাকেনা চলে। গাবতলীর মতো স্থায়ী হাট ছাড়াও এ সময় রাজধানীতে গড়ে ওঠে অনেক মৌসুমি হাট।
এসব হাট মূলত কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এসব হাটের মধ্যে রয়েছে আগারগাঁও তালতলা গরুর হাট, মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিং গরুর হাট, উত্তরার আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, হাজারীবাগ গরুর হাট, পুরান ঢাকায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মাঠ ও পোস্তগোলা গরুর হাট। ঢাকা মহানগরে গাবতলীর মতো সাভারের নয়ারহাট একটি ঐতিহ্যবাহী গরুর হাট। এ ছাড়া নবাবগঞ্জ, দোহার ও কেরানীগঞ্জে বসে গরুর বেশকিছু হাট।
গাবতলীর ইতিহাস:
ব্রিটিশ আমলে বর্তমান ঢাকার (জাহাঙ্গীর নগর) মোকিমাবাদ পরগনার জমিদার ছিলেন হাজী মুন্সি লাল মিয়া সাহেব। তিনি ঢাকার মিরপুরের মাজার রোড এলাকাতে বসবাস করতেন। তিনি একজন সমাজ সেবক, ধার্মিক ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। ১৯১৭ সালে তিনি মাজার রোডে দুধ মেহের দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং সম-সাময়িক সময়েই তিনি এখানে একটি হাট বসিয়েছিলেন।
তখন সপ্তাহে একদিন হাট বসতো এবং এই এলাকা সহ আশ-পাশের এলাকার লোকজন পায়ে হেঁটে, নৌকায় চড়ে এই হাটে এসে বেচাকেনা করতো। তখন এই হাটটি ছিল তুরাগ নদীর পাড়ে বর্তমান মাজার রোডে অবস্থিত। তৎকালীন সময়েও তুরাগ নদী ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নদীকে কেন্দ্র করে নদীর পাড় ধরে একটু উঁচু এলাকাতে মানুষের বসবাস বেশি ছিল।
আর তুরাগ নদীর পাড়ে এই হাটটি অবস্থিত হওয়ার কারণে দিন দিন এটি বেশ জম-জমাট হয়ে উঠতে শুরু করে। সে সময়ে এখানে জমিদারের একটি বাগান ছিল, আর এই বাগানে বিশাল-বিশাল আকারের আম,কাঁঠাল ও গাবগাছ ছিল। বিশেষ করে, হাটের ভেতরে ও হাটের পাশে বিশাল আকারের বিপুল সংখ্যক গাবগাছ থাকার কারণে এটি গাবতলীর হাট নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৩১ সালে জমিদার মুন্সি লাল মিয়া মাজার রোডে এখানকার মোট ৩১ একর জমি ওয়াকফ করে দিয়ে যান। এই ওয়াকফ এস্টেটের মধ্যে গাবতলীহাট, দুধ মেহের দাতব্য চিকিৎসালয়,তিনটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, একটি প্রাইমারি স্কুল (মুন্সি লাল মিয়া প্রাইমারি স্কুল), একটি ঈদগাহ মাঠ, একটি বড় কবর স্থান (সাধারন মানুষের জন্য) এবং একটি পারিবারিক কবর স্থান প্রতিষ্ঠা করে যান।
ঢাকা গরুর হাট বাজার কোথায় কোথায় বসে
প্রাসঙ্গিক আলোচনায় জমিদার সাহেবের নাতি জাহাঙ্গীর আলম বাবলা জানিয়েছিলেন, ওয়াকফ এস্টেটের চুক্তিনামা অনুযায়ী এই জমি থেকে আয়ের টাকা দিয়ে উল্লেখিত সকল প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ খরচ বহন করার পর যে টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে সেই টাকা জমিদারের আওলাদগণ ভোগ করতে পারবেন। তবে এই জমি কখনোই জমিদারের আওলাদগণ বিক্রি করতে পারবেননা। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এই হাটে গবাদি পশু বেচা-কেনা হতো।
কালের পরিক্রমায় এই হাটটি দিন দিন আরো বেশি পরিচিতি লাভ করতে থাকে। এমনকি গাবতলী গরুর হাট হিসেবে এর পরিচিতি আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তুরাগ নদীর পাড়ে এ হাটকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় গরু/মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ী চলার প্রচলন ছিল। এখানে নৌকা ঘাট ছিল এবং পরবর্তী সময়ে এখানে বাস স্টেশন তৈরি হয়েছিল। ১৯৫৪ সালে ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ রুটের এই সড়ক নির্মিত হয়েছিল। গাবতলী হাটকে কেন্দ্র করে তখন এখানে(মাজার রোডে একটি বাস স্টেশন/টার্মিনাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর ১৯৫৪ সালে এটি গাবতলী হাট এর পাশাপাশি গাবতলী বাস স্টেশন হিসেবেও পরিচিতি পায়।
গাবতলী পশুর হাট :
১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত পুরাতন গাবতলীতে (মাজার রোড) ছিল পশুর হাট। আর ১৯৮২ সালে পুরাতন গাবতলী পশুর হাটকে সাভারের ফুলবাড়িতে শিফট করা হয়।
তখন ফুলবাড়ি এলাকার প্রভাবশালী কবির সাহের তার নিজের জায়গার উপরে পশুর হাটটি বসতে দিয়েছিলেন। এদিকে গাবতলী থেকে পশুর হাট চলে যাওয়ার কারণে এই এলাকার এক শ্রেণীর লোকের (যারা পশুর হাটের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল) আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। তখন এই এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি জনাব, লাল মিয়া ফকির (ডিপজল সাহেবের নানা) এর উদ্যোগে আবারও গাবতলীতে হাট শুরু হয়।
এখানে সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘন্টা গরু কিনতে পাওয়া যাবে।
এখানে আমি উল্লেখযোগ্য কিছু গরুর হাটের বর্ণনা ও তথ্য দিয়েছি।
এবার আরো কিছু গরুর হাটের তথ্য জানবো।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার মোট সাতটি হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পূর্বাচলমুখী ৩০০ ফুট প্রশস্থ সড়কের পাশে বাংলাদেশ পুলিশ হাউজিংয়ের জমিসংলগ্ন এলাকা, উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের মধ্যবর্তী সেতুসংলগ্ন এলাকা, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্প, মিরপুর সেকশন-৬, ইস্টার্ন হাউজিং, মিরপুর সেকশন-১১, বাওনিয়া বাঁধ, গাবতলী পশুর হাট, রায়েরবাজার কবরস্থানসংলগ্ন পশ্চিমাঞ্চল পুলিশ লাইনের জন্য নির্ধারিত খালি জমিতে এসব হাট বসেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১০টি হাট। এর মধ্যে সাদেক হোসেন খোকা মাঠ, ধূপখোলার ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, কমলাপুরসংলগ্ন গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নসংলগ্ন বালুর মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন খালি জায়গা, খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজার, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, লালবাগের মরহুম হাজি দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বেড়িবাঁধ ও এর আশপাশের খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গায়।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমোদিত ছয়টি হাট হলো—কদমতলীর শ্যামপুর বালুর মাঠ, মুক্তি সরণি রোড-আদর্শনগর রোড-গোয়ালবাড়ী মোড়-বর্ণমালা স্কুলসংলগ্ন ফাঁকা জায়গা, আশকোনা আশিয়ান সিটি হাউজিং এস্টেটের ফাঁকা জায়গা, নতুন বাজার বালু নদের ১০০ ফুট চওড়া রাস্তার ৪ নম্বর ব্রিজ থেকে বালু নদ পর্যন্ত উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা, সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাট এবং বাড্ডার মেরাদিয়ার ইন্দুলিয়া-দাউদকান্দি-বাঘাপুর।
করোনার বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ডিএনসিসির আফতাব নগরের হাট এবার বসছে না। এছাড়া তেজাগাঁও সাত রাস্তায় যে হাট বসতো সেটিও বন্ধ থাকবে।
উত্তরাবাসীর জন্য বিশেষ করে উত্তর ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নং সেক্টরের মধ্যে একটি বড় হাট ছিল। এটিও এবার বসবে না। তবে উত্তরাবাসীর জন্য ১৭ নং সেক্টরের বিন্দাবন এলাকায় যেখানে বসতি নেই সেখানে হাট থাকবে।
গাবতলীর স্থায়ী হাটে পশু কেনা বেচা হবে। আর মোহাম্মদপুর এলাকার জন্য রায়েরবাজার কবরস্থানের পাশে বছিলা হাট, বাউনিয়াতে বসতে পারে। এছাড়া সাঈদ নগর, কাওলা, ডুমনী, ময়নার টেক ও ভাটারা এলাকায় হাট বসবে। মিরপুরের ভাষানটেক হাট বন্ধ থাকবে, মিরপুর ৬ নং ইস্টার্ণ হাউজিং হাটও বন্ধ থাকবে।
nics